প্রভাত না হতে সারা গাঁওখানি কিল বিল করি ভরিল বেদের দলে, বেলোয়ারী চুড়ি চিনের সিদুর, রঙিন খেলনা হাঁকিয়া হাঁকিয়া চলে। ছোট ছোট ছেলে আর যত মেয়ে আগে পিছে ধায় আড়াআড়ি করি ডাকে,…
জসীম উদ্দীন
জসীম উদ্দীন ( Jasimuddin ) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি ও লেখক। তিনি ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জসীম উদ্দীনের কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল গ্রাম বাংলার চিরচায়িত রূপ। তাই তাকে পল্লী কবি উপাধিতে ভূষিত করা হয়। জসীম উদ্দীন রচিত আখ্যানকাব্য নকশী কাঁথার মাঠ ও সোজন বাদিয়ার ঘাট বিশ্বের বহু ভাষায় অনূদিত হয়। একজন গীতিকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবেও তার খ্যাতি কম নয়। তৎকালীন পুর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি ছিলেন তিনি। আসমানী, কবর, প্রতিদান, রাখালী, নিমন্ত্রণ, পল্লী-বর্ষা, নকশী কাঁথার মাঠ ইত্যাদি তার বিখ্যাত কবিতা (Poem)। পল্লী কবি জসীম উদ্দীন ১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন এবং ফরিদপুরের আম্বিকাপুর গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।
কবর – জসীম উদ্দীন
এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে, তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে। এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ, পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক। এখানে ওখানে ঘুরিয়া…
জেলে গাঙে মাছ ধরিতে যায় __জসীম উদ্দীন
জেলে গাঙে মাছ ধরিতে যায়, পদ্মা নদীর উজান বাঁকে ছোট্ট ডিঙি নায়। পদ্মা নদী কাটাল ভারী, চাক্কুতে যায় কাটা, তারির পরে জেলের তরী করে উজান+ভাঁটা। জলের উপর শ্যাওলা ভাসে, স্রোতের ফুলও ভাসে,…
পল্লী জননী __জসীম উদ্দীন
রাত থম থম স্তব্ধ, ঘোর-ঘোর-আন্ধার, নিশ্বাস ফেলি, তাও শোনা যায়, নাই কোথা সাড়া কার। রুগ্ন ছেলের শিয়রে বিসয়া একেলা জাগিছে মাতা, করুণ চাহনি ঘুম ঘুম যেন ঢুলিছে চোখের পাতা। শিয়রের কাছে নিবু…
রাখাল ছেলে – জসীম উদ্দীন
“রাখাল ছেলে ! রাখাল ছেলে ! বারেক ফিরে চাও, বাঁকা গাঁয়ের পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও?” ওই যে দেখ নীল-নোয়ান সবুজ ঘেরা গাঁ, কলার পাতা দোলায় চামর শিশির ধোয়ায় পা, সেথায় আছে…
রাখালী __জসীম উদ্দীন
এই গাঁয়েতে একটি মেয়ে চুলগুলি তার কালো কালো, মাঝে সোনার মুখটি হাসে আঁধারেতে চাঁদের আলো। রানতে বসে জল আনতে সকল কাজেই হাসি যে তার, এই নিয়ে সে অনেক বারই মায়ের কাছে খেয়েছে…
ধান ক্ষেত __জসীম উদ্দীন
পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত, সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত। ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে, ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে। কৃষাণ কনের বিয়ে…
নিমন্ত্রণ – জসীম উদ্দীন
তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়, গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়; মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি, মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়,…
পল্লী-বর্ষা __জসীম উদ্দীন
আজিকের রোদ ঘুমায়ে পড়িয়া ঘোলাট-মেঘের আড়ে, কেয়া-বন পথে স্বপন বুনিছে ছল ছল জল-ধারে। কাহার ঝিয়ারী কদম্ব-শাখে নিঝ্ঝুম নিরালায়, ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে অস্ফুট কলিকায়! বাদলের জলে নাহিয়া সে মেয়ে হেসে কুটি…
যাব আমি তোমার দেশে __জসীম উদ্দীন
পল্লী-দুলাল, যাব আমি-যাব আমি তোমার দেশে, আকাশ যাহার বনের শীষে দিক-হারা মাঠ চরণ ঘেঁষে। দূর দেশীয়া মেঘ-কনেরা মাথায় লয়ে জলের ঝারি, দাঁড়ায় যাহার কোলটি ঘেঁষে বিজলী-পেড়ে আঁচল নাড়ি। বেতস কেয়ার মাথায় যেথায়…