প্রভাত না হতে সারা গাঁওখানি কিল বিল করি ভরিল বেদের দলে, বেলোয়ারী চুড়ি চিনের সিদুর, রঙিন খেলনা হাঁকিয়া হাঁকিয়া চলে। ছোট ছোট ছেলে আর যত মেয়ে আগে পিছে ধায় আড়াআড়ি করি ডাকে, এ বলে এ বাড়ি, সে বলে ও বাড়ি, ঘিরিয়াছে যেন মধুর মাছির চাকে। কেউ কিনিয়াছে নতুন ঝাঁজর, সবারে ...
Read More »কবর – জসীম উদ্দীন
এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে, তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে। এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ, পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক। এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা, সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা। সোনালী ঊষায় সোনামুখে তার আমার ...
Read More »জেলে গাঙে মাছ ধরিতে যায় __জসীম উদ্দীন
জেলে গাঙে মাছ ধরিতে যায়, পদ্মা নদীর উজান বাঁকে ছোট্ট ডিঙি নায়। পদ্মা নদী কাটাল ভারী, চাক্কুতে যায় কাটা, তারির পরে জেলের তরী করে উজান+ভাঁটা। জলের উপর শ্যাওলা ভাসে, স্রোতের ফুলও ভাসে, তারির পরে জেলের তরী ফুলেল পালে হাসে; তারি সাথে ভাসায় জেলে ভাটীর সুরে গান, জেলেনী তার হয়ত তাহার ...
Read More »পল্লী জননী __জসীম উদ্দীন
রাত থম থম স্তব্ধ, ঘোর-ঘোর-আন্ধার, নিশ্বাস ফেলি, তাও শোনা যায়, নাই কোথা সাড়া কার। রুগ্ন ছেলের শিয়রে বিসয়া একেলা জাগিছে মাতা, করুণ চাহনি ঘুম ঘুম যেন ঢুলিছে চোখের পাতা। শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্বলে, তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে। ভন্ ভন্ ভন্ জমাট বেঁধেছে ...
Read More »রাখাল ছেলে – জসীম উদ্দীন
“রাখাল ছেলে ! রাখাল ছেলে ! বারেক ফিরে চাও, বাঁকা গাঁয়ের পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও?” ওই যে দেখ নীল-নোয়ান সবুজ ঘেরা গাঁ, কলার পাতা দোলায় চামর শিশির ধোয়ায় পা, সেথায় আছে ছোট কুটির সোনার পাতায় ছাওয়া, সাঁঝ-আকাশের ছড়িয়ে-পড়া আবীর রঙে নাওয়া, সেই ঘরেতে একলা বসে ডাকছে আমার মা- সেথায় ...
Read More »রাখালী __জসীম উদ্দীন
এই গাঁয়েতে একটি মেয়ে চুলগুলি তার কালো কালো, মাঝে সোনার মুখটি হাসে আঁধারেতে চাঁদের আলো। রানতে বসে জল আনতে সকল কাজেই হাসি যে তার, এই নিয়ে সে অনেক বারই মায়ের কাছে খেয়েছে মার। সান করিয়া ভিজে চুলে কাঁখে ভরা ঘড়ার ভারে মুখের হাসি দ্বিগুণ ছোটে কোনমতেই থামতে নারে। এই মেয়েটি ...
Read More »ধান ক্ষেত __জসীম উদ্দীন
পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত, সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত। ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে, ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে। কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী, হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি। কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার ...
Read More »নিমন্ত্রণ – জসীম উদ্দীন
তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়, গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়; মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি, মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়, তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়, ছোট গাঁওখানি- ছোট নদী চলে, তারি একপাশ দিয়া, ...
Read More »পল্লী-বর্ষা __জসীম উদ্দীন
আজিকের রোদ ঘুমায়ে পড়িয়া ঘোলাট-মেঘের আড়ে, কেয়া-বন পথে স্বপন বুনিছে ছল ছল জল-ধারে। কাহার ঝিয়ারী কদম্ব-শাখে নিঝ্ঝুম নিরালায়, ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে অস্ফুট কলিকায়! বাদলের জলে নাহিয়া সে মেয়ে হেসে কুটি কুটি হয়, সে হাসি তাহার অধর নিঙাড়ি লুটাইছে বনময়। কাননের পথে লহর খেলিছে অবিরাম জল-ধারা তারি স্রোতে আজি ...
Read More »যাব আমি তোমার দেশে __জসীম উদ্দীন
পল্লী-দুলাল, যাব আমি-যাব আমি তোমার দেশে, আকাশ যাহার বনের শীষে দিক-হারা মাঠ চরণ ঘেঁষে। দূর দেশীয়া মেঘ-কনেরা মাথায় লয়ে জলের ঝারি, দাঁড়ায় যাহার কোলটি ঘেঁষে বিজলী-পেড়ে আঁচল নাড়ি। বেতস কেয়ার মাথায় যেথায় ডাহুক ডাকে বনের ছায়ায়, পল্লী-দুলাল ভাইগো আমার, যাব আমি যাব সেথায়। তোমার দেশে যাব আমি, দিঘল বাঁকা পন্থখানি, ...
Read More »