জলের উপরে চলেছে জলের মেয়ে, ভাঙিয়া টুটিয়া আছড়িয়া পড়ে ঢেউগুলি তটে যেয়ে। জলের রঙের শাড়ীতে তাহার জড়ায়ে জড়ায়ে ঘুরি, মাতাল বাতাস অঙ্গের ঘ্রাণ ফিরিছে করিয়া চুরি। কাজলে মেখেছে নতুন চরের সবুজ ধানের কায়া, নয়নে ভরেছে ফটিকজলের গহন গভীর মায়া। তাহার উপর ছায়া-চুরি খেলা করিতে তটের বন, সুবাস ফুলের গন্ধ ছড়ায়ে ...
Read More »তারাবি __জসীম উদ্দীন
তারাবি নামাজ পড়িতে যাইব মোল্লাবাড়িতে আজ, মেনাজদ্দীন, কলিমদ্দীন, আয় তোরা করি সাজ। চালের বাতায় গোঁজা ছিল সেই পুরাতন জুতা জোড়া, ধুলাবালু আর রোদ লেগে তাহা হইয়াছে পাঁচ মোড়া। তাহারি মধ্যে অবাধ্য এই চরণ দুখানি ঠেলে, চল দেখি ভাই খলিলদ্দীন, লুন্ঠন-বাতি জ্বেলে। ঢৈলারে ডাক, লস্কর কোথা, কিনুরে খবর দাও। মোল্লাবাড়িতে একত্র ...
Read More »দেশ __জসীম উদ্দীন
খেতের পরে খেত চলেছে, খেতের নাহি শেষ সবুজ হাওয়ায় দুলছে ও কার এলো মাথার কেশ। সেই কেশেতে গয়না ও পরায় প্রজাপতির ঝাঁক, চঞ্চুতে জল ছিটায় সেথা কালো কালো কাক। সাদা সাদা বক-কনেরা রচে সেথায় মালা, শরৎকালের শিশির সেথা জ্বালায মানিক আলা। তারি মায়ায় থোকা থোকা দোলে ধানের ছড়া, মার আঁচলের ...
Read More »বস্তীর মেয়ে __জসীম উদ্দীন
বস্তীর বোন, তোমারে আজিকে ছেড়ে চলে যেতে হবে, যত দূরে যাব তোমাদের কথা চিরদিন মনে রবে। মনে রবে, সেই ভ্যাঁপসা গন্ধ অন্ধ-গলির মাঝে, আমার সে ছোট বোনটির দিন কাটিছে মলিন সাজে। পেটভরা সে যে পায় না আহার, পরনে ছিন্নবাস, দারুণ দৈন্য অভাবের মাঝে কাটে তার বারোমাস। আরো মনে রবে, সুযোগ ...
Read More »রজনী গন্ধার বিদায় __জসীম উদ্দীন
শেষ রাত্রের পান্ডুর চাঁদ নামিছে চক্রবালে, রজনী গন্ধা রূপসীর আঁখি জড়াইছে ঘুম-জালে। অলস চরণে চলিতে চলিতে ঢলিয়া ঢলিয়া পড়ে, শিথিল শ্রানি- চুমিছে তাহার সারাটি অঙ্গ ধরে! উতল কেশেরে খেলা দিতে শেষ উতল রাতের বায়ু: ঘুমাতে ঘুমাতে কাঁপিয়া উঠিছে স্মরিয়া রাতের আয়ু। রজনী- গন্ধা রাতের রূপসী ঝুমিছে শ্রানি-ভরে, অঙ্গ হইতে ঝরিছে ...
Read More »রাতের পরী __জসীম উদ্দীন
রাতের বেলায় আসে যে রাতের পরী, রজনীগন্ধা ফুলের গন্ধে সকল বাতাস ভরি। চরণের ঘায়ে রাতের প্রদীপ নিভিয়া নিভিয়া যায়, হাসপাতালের ঘর ভরিয়াছে চাঁদিমার জোছনায়। মানস সরের তীর হতে যেন ধবল বলাকা আসে, ধবল পাখায় ঘুম ভরে আনে ধবল ফুলের বাসে। নয়ন ভরিয়া আনে সে মদিরা, সুদূর সাগর পারে, ধবল দ্বীপের ...
Read More »উজান গাঙের নাইয়া __জসীম উদ্দীন
উজান গাঙের নাইয়া! কইবার নি পাররে নদী গেছে কতদূর? যে কূল ধইরা চলেরে নদী সে কূল ভাইঙ্গা যায়, আবার আলসে ঘুমায়া পড়ে সেই কূলেরি গায়; আমার ভাঙা কূলে ভাসাই তরীরে যদি পাই দেখা বন্ধুর। নদীর পানি শুনছি নাকি সায়র পানে ধায়, আমার চোখের পানি মিলব যায়া কোন সে দরিয়ায় সেই ...
Read More »নদীর কূল নাই কিনার নাইরে – জসীম উদ্দীন
নদীর কূল নাই-কিনার নাইরে; আমি কোন কূল হইতে কোন কূলে যাব কাহারে শুধাইরে? ওপারে মেঘের ঘটা, কনক বিজলী ছটা, মাঝে নদী বহে সাঁই সাঁইরে; আমি এই দেখিলাম সোনার ছবি আবার দেখি নাইরে; আমি দেখিতে দেখিতে সে রূপ আবার দেখি নাইরে। বেসম নদীর পানি, ঢেউ করে হানাহানি, ভাঙা এ তরনী তবু ...
Read More »নিশিতে যাইও ফুলবনে – জসীম উদ্দীন
নিশিতে যাইও ফুলবনে রে ভোমরা নিশিতে যাইও ফুলবনে। জ্বালায়ে চান্দের বাতি আমি জেগে রব সারা রাতি গো; কব কথা শিশিরের সনে রে ভোমরা! নিশিতে যাইও ফুলবনে। যদিবা ঘুমায়ে পড়ি- স্বপনের পথ ধরি গো, যেও তুমি নীরব চরণে রে ভোমরা! (আমার ডাল যেন ভাঙে না, আমার ফুল যেন ভাঙে না, ফুলের ...
Read More »বাঁশরী আমার হারায়ে গিয়েছে __জসীম উদ্দীন
বাঁশরী আমার হারায়ে গিয়েছে বালুর চরে, কেমনে ফিরিব গোধন লইয়া গাঁয়ের ঘরে। কোমল তৃণের পরশ লাগিয়া, পায়ের নুপুর পড়িয়াছে খসিয়া। চলিতে চরণ ওঠে না বাজিয়া তেমন করে। কোথায় খেলার সাথীরা আমার কোথায় ধেনু, সাঝেঁর হিয়ায় রাঙিয়া উঠিছে গোখুর-রেণু। ফোটা সরিষার পাঁপড়ির ভরে চরো মাঠখানি কাঁপে থরে থরে। সাঁঝের শিশির দুচরণ ...
Read More »