ভ্রমরীর মতো চুপে সৃজনের ছায়াধূপে ঘুরে মরে মন আমি নিদালির আঁখি, নেশাখোর চোখের স্বপন! নিরালায় সুর সাধি,- বাঁধি মোর মানসীর বেণী, মানুষ দেখেনি মোরে কোনোদিন,- আমারে চেনেনি! কোনো ভিড় কোনোদিন দাঁড়ায়নি মোর চারিপাশে,- শুধায়নি কেহ কভু-‘আসে কি রে,- সে কি আসে-আসে!’ আসেনি সে ভরাহাটে-খয়াঘাটে-পৃথিবীর পসরায় মাঝে, পাটনী দেখেনি তারে কোনোদিন,মাঝি ...
Read More »দেশবন্ধু __জীবনানন্দ দাশ
বাংলার অঙ্গনেতে বাজায়েছ নটেশের রঙ্গমল্লী গাঁথা অশান্ত সন্তান ওগো,- বিপ্লবিনী পদ্মা ছিল তব নদী-মাতা। কালবৈশাখীর দোলা অনিবার দুলাইতে রক্তপুঞ্জ তব উত্তাল ঊর্মির তালে,-বক্ষে তবু লক্ষ কোটি পন্নগ-উৎসব উদ্যত ফণার নৃত্যে আষ্ফালিত ধূর্জটির কন্ঠ-নাগ জিনি, ত্র্যম্বক-পিনাকে তব শঙ্কাকুল ছিল সদা শত্রু অক্ষৌহিণী। স্পর্শে তব পুরোহিত, ক্লেদে প্রাণ নিমেষেতে উঠিত সঞ্চারি, এসেছিলে ...
Read More »হিন্দু-মুসলমান __জীবনানন্দ দাশ
মহামৈত্রীর বরদ-তীর্থে-পুণ্য ভারতপুরে পূজার ঘন্টা মিশিছে হরষে নমাজের সুরে সুরে! আহ্নিক হেথা শুরু হয়ে যায় আজান বেলার মাঝে, মুয়াজ্জেনের উদাস ধ্বনিটি গগনে গগনে বাজে, জপে ঈদগাতে তসবি ফকির, পূজারী মন্ত্র পড়ে, সন্ধ্যা-উষার বেদবাণী যায় মিশে কোরানের স্বরে; সন্ন্যাসী আর পীর মিলে গেছে হেথা,-মিশে গেছে হেথা মসজিদ , মন্দির! কে বলে ...
Read More »যে কামনা নিয়ে __জীবনানন্দ দাশ
যে কামনা নিয়ে মধুমাছি ফেরে বুকে মোর সেই তৃষা! খুঁজে মরি রূপ, ছায়াধূপ জুড়ি, রঙের মাঝারে হেরি রঙডুবি! পরাগের ঠোঁটে পরিমল-গুঁড়ি,- হারায়ে ফেলি গো দিশা! আমি প্রজাপতি-মিঠা মাঠে মাঠে সোঁদালে সর্ষেক্ষেতে; -রোদের সফরে খুঁজি নাকো ঘর, বাঁধি নাকো বাসা-কাঁপি থরথর। অতসী ছুঁড়ির ঠোঁটের উপর শুঁড়ির গেলাসে মেতে! আমি দক্ষিণা-দুলালীর বীণা,পউষ-পরশ-হারা! ...
Read More »স্মৃতি __জীবনানন্দ দাশ
থমথমে রাত,- আমার পাশে বসল অতিথি,- বললে,- আমি অতীত ক্ষুধা,-তোমার অতীত স্মৃতি! -যে দিনগুলো সাঙ্গ হ’ল ঝড়বাদলের জলে, শুষে গেল মেরুর হিমে,- মরুর অনলে, ছায়ার মতো মিশেছিলাম আমি তাদের সনে; তারা কোথায়?-বন্দি স্মৃতিই কাঁদছে তোমার মনে! কাঁদছে তোমার মনের খাকে,- চাপা ছাইয়ের তলে, কাঁদছে তোমার স্যাঁতস্যাঁতে শ্বাস-ভিজা চোখের জলে, কাঁদছে ...
Read More »সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয় __জীবনানন্দ দাশ
চোখ দুটো ঘুমে ভরে ঝরা ফসলের গান বুকে নিয়ে আজ ফিরে যাই ঘরে! ফুরায়ে গিয়েছে যা ছিল গোপন,- স্বপন ক’দিন রয়! এসেছে গোধূলি গোলাপিবরণ,-এ তবু গোধূলি নয়! সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয়, আমাদের মুখ সারাটি রাত্রি মাটির বুকের’পরে! কেটেছে যে নিশি ঢের,- এতদিন তবু অন্ধকারের পাইনি তো কোনো ...
Read More »বনলতা সেন – জীবনানন্দ দাশ
বনলতা সেন ( Bonolota Sen ) বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতা। যার লেখক বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় আধুনিক বাঙালি কবি জীবনানন্দ দাশ। বনলতা সেন কবিতাটি (Banalata Sen) ১ম প্রকাশিত হয় ১৯৩৫ সালে ডিসেম্বর মাসে কবি বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত কবিতা পত্রিকায়। বনলতা সেন কবিতা টি সর্বকালের সবচেয়ে বেশি পঠিত বাংলা কবিতা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। বনলতা সেন ...
Read More »কুড়ি বছর পরে – জীবনানন্দ দাশ
আবার বছর কুড়ি পরে তার সাথে দেখা হয় যদি! আবার বছর কুড়ি পরে- হয়তো ধানের ছড়ার পাশে কার্তিকের মাসে- তখন সন্ধ্যার কাক ঘরে ফেরে-তখন হলুদ নদী নরম নরম হয় শর কাশ হোগলায়-মাঠের ভিতরে! অথবা নাইকো ধান ক্ষেতে আর, ব্যস্ততা নাইকো আর, হাঁসের নীড়ের থেকে খড় পাখির নীড়ের থেকে খড় ছড়াতেছে; ...
Read More »হাওয়ার রাত __জীবনানন্দ দাশ
গভীর হাওয়ার রাত ছিল কাল-অসংখ্য নক্ষত্রের রাত ; সারা রাত বির্স্তীর্ণ হাওয়া আমার মশারিতে খেলেছে; মশারিটা ফুলে উঠেছে কখনো মৌসুমী সমুদ্রের পেটের মতো, কখনো বিছানা ছিঁড়ে নক্ষত্রের দিকে উড়ে যেতে চেয়েছে, এক-একবার মনে হচ্ছিল আমার-আধো ঘুমের ভিতর হয়তো- মাথার উপরে মশারি নেই আমার স্বাতী তারার কোল ঘেঁষে নীল হাওয়ার সমুদ্রে ...
Read More »আমি যদি হতাম – জীবনানন্দ দাশ
আমি যদি হতাম বনহংস, বনহংসী হতে যদি তুমি; কোনো এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে ধানক্ষেতের কাছে ছিপছিপে শরের ভিতর এক নিরালা নীড়ে; তাহলে আজ এই ফাল্পুনের রাতে ঝাউয়ের শাখার পেছনে চাঁদ উঠতে দেখে আমরা নিম্নভূমির জলের গন্ধ ছেড়ে আকাশের রুপালি শস্যের ভিতর গা ভাসিয়ে দিতাম- তোমার পাখনায় আমার পালক, আমার ...
Read More »