ওই বাড়ি, শিরীষের পাতায় আহত… এ-সত্য মৃত্যুর হিম ছোঁয়া দিয়ে তাকে ব’লে যাবে, আজই নয়, কিন্তু কাল তোর মসৃণ চূড়াটি ভাঙবো, পলেস্তরা খশাবো পীযূষে ভাঙবো, ভেঙে টুকরো করবো ইট কাঠ পাথর প্রতিমা…
শক্তি চট্টোপাধ্যায়
শক্তি চট্টোপাধ্যায় (Shakti Chattopadhyay) ছিলেন একজন বাঙ্গালি কবি,লেখক, ওপন্যাসিক। শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৩ সালের ২৭ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার জয়নগরে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনানন্দ উত্তর সময়ে তাকে সবচেয়ে শক্তিমান কবি হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। তিনি কবিদের হাংরি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তি। যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো? একবার তুমি, অবনী বাড়ি আছো, চাবি, মনে মনে বহুদূর চলে গেছি ইত্যাদি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কবিতা (Poem)।
স্টেশন ভাসিয়ে বৃষ্টি __শক্তি চট্টোপাধ্যায়
মনে পড়ে স্টেশন ভাসিয়ে বৃষ্টি রাজপথ ধ’রে ক্রমাগত সাইকেল ঘন্টির মতো চলে গেছে, পথিক সাবধান… শুধু স্বেচ্ছাচারী আমি, হাওয়া আর ভিক্ষুকের ঝুলি যেতে-যেতে ফিরে চায়, কুড়োতে-কুড়োতে দেয় ফেলে যেন তুমি, আলস্যে এলে…
ভয় আমার পিছু নিয়েছে __শক্তি চট্টোপাধ্যায়
জঙ্গলে গিয়েছো তুমি একা একা, জঙ্গলে যেও না তুমি, মানে তুমি, মানে তুমি, ভুল বৃদ্ধ–ওহে তুমি জঙ্গলে গিয়েছো একা? হারিয়েছো পথ? সর্বস্ব হারিয়ে কোনো অন্নপূর্ণা গাছ ধরে জড়িয়ে কেঁদেছো? পাতা চেয়ে ফুলে…
তোমার হাত __শক্তি চট্টোপাধ্যায়
তোমার হাত যে ধরেইছিলাম তাই পারিনি জানতে এই দেশে বসতি করে শান্তি শান্তি শান্তি তোমার হাত যে ধরেইছিলাম তাই পারিনি জানতে সফলতার দীর্ঘ সিঁড়ি, তার নিচে ভুল-ভ্রান্তি কিছুই জানতে পারিনি আজ, কাল…
হেমন্ত যেখানে থাকে __শক্তি চট্টোপাধ্যায়
হেমন্ত যেখানে থাকে, সেখানে কৌতুক থাকে গাছে সাড়া থাকে, সচ্ছলতা থাকে। মানুষের মতো নয়, ভেঙে ভেঙে জোড়ার ক্ষমতা গাছেদের কাছে নেই হেমন্ত বার্ধক্য নিতে আসে খসায় শুকনো ডাল, মড়া পাতা, মর্কুটে বাকল…
অবনী বাড়ি আছো – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
অবনী বাড়ি আছো অবনী বাড়ি আছো দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া ‘অবনী বাড়ি আছো?’ বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস দুয়ার চেপে…
আমি যাই __শক্তি চট্টোপাধ্যায়
যেখানেই থাকো এপথে আসতেই হবে ছাড়ান্ নেই সম্বল বলতে সেই দিন কয়েকের গল্প অল্প অল্পই আমি যাই তোমরা পরে এসো ঘড়ি-ঘন্টা মিলিয়ে শাক-সবজি বিলিয়ে তোমরা এসো
এক অসুখে দুজন অন্ধ __শক্তি চট্টোপাধ্যায়
আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ দীর্ঘ দাঁতের করাত ও ঢেউ নীল দিগন্ত সমান করে বালিতে আধ-কোমর বন্ধ এই আনন্দময় কবরে আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ ।…
এবার হয়েছে সন্ধ্যা __শক্তি চট্টোপাধ্যায়
এবার হয়েছে সন্ধ্যা। সারাদিন ভেঙেছো পাথর পাহাড়ের কোলে আষাঢ়ের বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলো শালের জঙ্গলে তোমারও তো শ্রান্ত হলো মুঠি অন্যায় হবে না – নাও ছুটি বিদেশেই চলো যে কথা বলনি আগে,…
কিছু মায়া রয়ে গেলো __শক্তি চট্টোপাধ্যায়
সকল প্রতাপ হল প্রায় অবসিত… জ্বালাহীন হৃদয়ের একান্ত নিভৃতে কিছু মায়া রয়ে গেলো দিনান্তের, শুধু এই – কোনোভাবে বেঁচে থেকে প্রণাম জানানো পৃথিবীকে। মূঢ়তার অপনোদনের শান্তি, শুধু এই – ঘৃনা নেই, নেই…