জেনেছি কাকে চাই, কে এলে চোখে ফোটে নিমেষে শরতের খুশির জ্যোতিকণা; কাঁপি না ভয়ে আর দ্বিধার নেই দোলা এবার তবে রাতে হাজার দীপ জ্বেলে সাজাবো তার পথ যদি সে হেঁটে আসে। যদি সে হেঁটে আসে, প্রাণের ছায়াপথ ফুলের মতো ফুটে তারার মতো ফুটে জ্বলবে সারারাত, ঝরবে সারারাত। জেনেছি কাকে চাই, ...
Read More »কোনো একজনের জন্যে __শামসুর রাহমান
এতকাল ছিলাম একা আর ব্যথিত, আহত পশুর অনুভবে ছেঁড়াখোঁড়া। দুর্গন্ধ-ভরা গুহাহিত রাত নিস্ফল ক্রোধে দীর্ণ, শীর্ণ হাহাকার ছাড়া গান ছিল না মনে, জানি প্রাণে ছিল না সতেজ পাতার কানাকানি এমনকি মরম্নভূমির তীব্রতাও ছিল না ধমনীতে, স্বপ্ন ছিল না, ছিল না স্বপ্নের মতো হৃদয়। কে জানতো এই খেয়ালি পতঙ্গ, শীতের ভোর, ...
Read More »তুমি বলেছিলে __শামসুর রাহমান
দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার। পুড়ছে দোকান-পাট, কাঠ, লোহা-লক্কড়ের স্তূপ, মসজিদ এবং মন্দির। দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার। বিষম পুড়ছে চতুর্দিকে ঘর-বাড়ি। পুড়ছে টিয়ের খাঁচা, রবীন্দ্র রচনাবলি, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, মানচিত্র, পুরনো দলিল। মৌচাকে আগুন দিলে যেমন সশব্দে সাধের আশ্রয় ত্যাগী হয় মৌমাছির ঝাঁক, তেমনি সবাই পালাচ্ছে শহর ছেড়ে ...
Read More »বাইবেলের কালো অক্ষরগুলো __শামসুর রাহমান
জো, তুমি আমাকে চিনবে না। আমি তোমারই মতো একজন কালো মানুষ গলার সবচেয়ে উঁচু পর্দায় গাইছি সেতুবন্ধের গান, যে গানে তোমার দিলখোলা সুরও লাগছে। জো, যখন ওরা তোমার চামড়ায় জ্বালা-ধরানো সপাং সপাং চাবুক মারে আর হো হো করে হেসে ওঠে, যখন ওরা বুটজুতোমোড়া পায়ে মারে তোমাকে, তখন ধূলায় মুখ থুবড়ে ...
Read More »কখনো আমার মাকে __শামসুর রাহমান
কখনো আমার মাকে কোনো গান গাইতে শুনিনি। সেই কবে শিশু রাতে ঘুম পাড়ানিয়া গান গেয়ে আমাকে কখনো ঘুম পাড়াতেন কি না আজ মনেই পড়ে না। যখন শরীরে তার বসন্তের সম্ভার আসেনি, যখন ছিলেন তিনি ঝড়ে আম-কুড়িয়ে বেড়ানো বয়সের কাছাকাছি হয়তো তখনো কোনো গান লতিয়ে ওঠেনি মীড়ে মীড়ে দুপুরে সন্ধ্যায়, পাছে ...
Read More »তিনি এসেছেন ফিরে __শামসুর রাহমান
লতাগুল্ম, বাঁশঝাড়, বাবুই পাখির বাসা আর মধুমতি নদীটির বুক থেকে বেদনাবিহ্বল ধ্বনি উঠে মেঘমালা ছুঁয়ে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলায়। এখন তো তিনি নেই, তবু সেই ধ্বনি আজ শুধু তাঁরই কথা বলে; মেঘনা নদীর মাঝি যখন নদীতে ভাটিয়ালী সুর তোলে, তার পালে লাগে দীর্ঘদেহী সেই পুরুষের দীর্ঘশ্বাস, যখন কৃষক কাস্তে ...
Read More »বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা __শামসুর রাহমান
নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়। মমতা নামের প্রুত প্রদেশের শ্যামলিমা তোমাকে নিবিড় ঘিরে রয় সর্বদাই। কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরে শিউলিশৈশবে ‘পাখী সব করে রব’ ব’লে মদনমোহন তর্কালঙ্কার কী ধীরোদাত্ত স্বরে প্রত্যহ দিতেন ডাক। তুমি আর আমি, অবিচ্ছিন্ন পরস্পর মমতায় লীন, ঘুরেছি কাননে তাঁ নেচে নেচে, যেখানে ...
Read More »একটি কবিতার জন্য __শামসুর রাহমান
বৃক্ষের নিকটে গিয়ে বলি ; দয়াবান বৃক্ষ তুমি একটি কবিতা দিতে পারো ? বৃক্ষ বলে আমার বাকল ফুঁড়ে আমার মজ্জায় যদি মিশে যেতে পারো, তবে হয়তো বা পেয়ে যাবে একটি কবিতা ! জীর্ণ দেয়ালের কানে বলি ; দেয়াল আমাকে তুমি একটি কবিতা দিতে পারো ? পুরোনো দেয়াল বলে শ্যাওলা-ঢাকা স্বরে, ...
Read More »তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা – শামসুর রাহমান
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ? আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ? তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা, সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো, সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর। তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা, শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো দানবের মত চিৎকার করতে করতে তুমি ...
Read More »রাজকাহিনী __শামসুর রাহমান
ধন্য রাজা ধন্য, দেশজোড়া তার সৈন্য! পথে-ঘাটে-ভেড়ার পাল। চাষীর গরু, মাঝির হাল, ঘটি-বাটি, গামছা, হাঁড়ি, সাত-মহলা আছে বাড়ি, আছে হাতি, আছে ঘোড়া। কেবল পোড়া মুখে পোরার দুমুঠো নেই অন্ন, ধন্য রাজা ধন্য। ঢ্যাম কুড় কুড় বাজনা বাজে, পথে-ঘাটে সান্ত্রী সাজে। শোনো সবাই হুকুমনামা, ধরতে হবে রাজার ধামা। বাঁ দিকে ভাই ...
Read More »