বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে চেয়ে দেখি ছাতার মতো ব্ড় পাতাটির নিচে বসে আছে ভোরের দয়েলপাখি – চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশথের করে আছে চুপ; ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে; মধুকর ডিঙা থেকে না জানি ...
Read More »আকাশলীনা – জীবনানন্দ দাশ
সুরঞ্জনা, ঐখানে যেয়োনাকো তুমি, বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে; ফিরে এসো সুরঞ্জনা: নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে; ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে; ফিরে এসো হৃদয়ে আমার; দূর থেকে দূরে – আরও দূরে যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর। কী কথা তাহার সাথে? – তার সাথে! আকাশের আড়ালে আকাশে মৃত্তিকার মতো তুমি ...
Read More »সপ্তক __জীবনানন্দ দাশ
এইখানে সরোজিনী শুয়ে আছে; – জানি না সে এইখানে শুয়ে আছে কিনা। অনেক হয়েছে শোয়া; – তারপর একদিন চ’লে গেছে কোন দূর মেঘে। অন্ধকার শেষ হ’লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে : সরোজিনী চলে গেলো অতদূর? সিঁড়ি ছাড়া – পাখিদের মত পাখা বিনা? হয়তো বা মৃত্তিকার জ্যামিতিক ঢেউ আজ? ...
Read More »আজকের এক মুহূর্ত __জীবনানন্দ দাশ
হে মৃত্যু, তুমি আমাকে ছেড়ে চলছ ব’লে আমি খুব গভীর খুশি? কিন্তু আরো খানিকটা চেয়েছিলাম; চারি দিকে তুমি হাড়ের পাহাড় বানিয়ে রেখেছে;– যে ঘোড়ায় চ’ড়ে আমি অতীত ঋষিদের সঙ্গে আকাশে নক্ষত্রে উড়ে যাব এই খানে মৃতবৎসা’ মাতাল, ভিখারি ও কুকুরদের ভিড়ে কোথায় তাকে রেখে দিলে তুমি? এত দিন ব’সে পুরোনো ...
Read More »আট বছর আগে একদিন – জীবনানন্দ দাশ
শোনা গেল লাশকাটা ঘরে নিয়ে গেছে তারে; কাল রাতে ফাল্গুনের রাতের আধারে যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাদ মরিবার হল তার সাধ। বধু শুয়ে ছিল পাশে-শিশুটিও ছিল; প্রেম ছিল, আশা ছিল জোছনায় তবু সে দেখিল কোন্ ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেল তার? অথবা হয় নি ঘুম বহুকাল- লাশকাটা ঘরে মুয়ে ঘুমায় ...
Read More »আদিম দেবতারা __জীবনানন্দ দাশ
আগুন বাতাস জল: আদিম দেবতারা তাদের সর্পিল পারিহাসে তোমাকে দিল রূপ- কী ভয়াবহ নির্জণ রূপ তোমাকে দিল তারা ; তোমার সংস্পর্শের মানুষের রক্তে দিল মাছির মতো কামনা। আগুন বাতাস জল: আদিম দেবাতারা তাদের বঙ্কিম পরিহাসে আমাকে দিল লিপি রচনা করবার আবেগ: যেন আমিও আগুন বাতাস জল, যেন তোমাকেও সৃষ্টি করছি। ...
Read More »ইহাদেরই কানে __জীবনানন্দ দাশ
একবার নক্ষত্রের পানে চেয়ে – একবার বেদনার পানে অনেক কবিতা লিখে চলে গেল যুবকের দল; পৃথিবীর পথে পথে সুন্দরীরা মুর্খ সসম্মানে শুনিল আধেক কথা – এই সব বধির নিশ্চল সোনার পিত্তল মূর্তি: তবু, আহা, ইহাদেরই কানে অনেক ঐশ্বর্য ঢেলে চলে গেল যুবকের দল: একবার নক্ষত্রের পানে চেয়ে – একবার বেদনার ...
Read More »ফিরে এসো __জীবনানন্দ দাশ
ফিরে এসো সমুদ্রের ধারে, ফিরে এসো প্রান্তরের পথে; যেইখানে ট্রেন এসে থামে আম নিম ঝাউয়ের জগতে ফিরে এসো; একদিন নীল ডিম করেছ বুনন; আজও্তারা শিশিরে নীরব; পাখির ঝর্না হয়ে কবে আমারে করিবে অনুভব।
Read More »স্থবির যৌবন __জীবনানন্দ দাশ
তারপর একদিন উজ্জ্বল মৃত্যুর দূত এসে কহিবে: তোমারে চাই-তোমারেই, নারী; এই সব সোনা রুপা মসলিন যুবাদের ছাড়ি চলে যেতে হবে দূর আবিষ্কারে ভেসে। বলিলাম; শুনিল সে: তুমি তবু মৃত্যুর দূর নও-তুমি-’ নগর-বন্দরে ঢের খুঁজিয়াছি আমি; তারপর তোমার এ জানালায় থামি ধোঁয়া সব; তুমি যেন মরীচিকা-আমি মরুভূমি-’ শীতের বাতাস নাকে চলে ...
Read More »স্বপ্ন __জীবনানন্দ দাশ
পান্ডুলিপি কাছে রেখে ধূসর দীপের কাছে আমি নিস্তব্ধ ছিলাম বসে; শিশির পড়িতেছিল ধীরে ধীরে খশে; নিমের শাখার থেকে একাকীতম কে পাখি নামি উড়ে গেল কুয়াশায়, –কুয়াশার থেকে দূর –কুয়াশার আরো। তাহারি পাখার হাওয়া প্রদীপ নিভায়ে গেলো বুঝি? অন্ধকার হাৎড়ায়ে ধীরে-ধীরে দেশলাই খুঁজি; যখন জ্বালিব আলো কার মুখ দেখা যাবে বলিতে ...
Read More »