– দূরে চলে যাও। তবু ছায়া
আঁকা থাকে মেঘে। যেন ওড়ে
বাতাসের সাদা বারান্দায়
বালুচরী বহু বর্ণময়।
গান শেষ তবু তখনো তার
প্রতিধ্বনিরা দশ দিকে।
যেন শুধু তুমি তোমারই সব
মূর্তিতে ঠাসা মিউজিয়াম
ট্রাম লাইনের, ছাইগাদার
গর্তে গভীর কলকাতায়।
কী করে এমন পারো তুমি
নন্দিনী?
– সহজ ম্যাজিক। শিখবে কি?
রুমালটা দাও, ঘন গিঁটে
চোখ দুটো বাঁধি। তারপরে
যাদুকাঠিটাকে ছুঁইয়ে দি,
কাছে এসো।
– অত বোকা নই নন্দিনী।
খানিকটা জানি, পুরুষকে
কী করে বানাও পোষা পাখি।
ঝর্না দেখাবে, কখনো তার
উৎসের চাবি খুলবে না।
বিছানা পাতবে মখমলের
কিন্তু বসতে দেবে চেয়ার।
সাজানো দোকানে থাক্কে থাক্
উর্বরতার বীজ ও সার
অথচ দুবেলা বন্ধ ঝাঁপ।
জলের যা খেলা, ভাসিয়ে সুখ
গাছ ডুবে গিয়ে মরে মরুক
জলের কী?
– মিথ্যে! মিথ্যে! শুভঙ্কর?
তোমারই ভুলে গাছকে মেঘ
বানিয়ে চেয়েছো বৃষ্টিজল।
যে-মোমবাতির ক্ষণজীবন
তারই কাছে এসে কেবলি চাও
এমন আলো যা অন্তহীন।
তোমরা বুনছো কল্পনায়
আমরা যা নই তারই ছাঁদে
সোনালী সুতোর লম্বা লেস।
– নন্দিনী! হায় এইটুকু
যথেচ্ছাচার আছে বলেই
এই মরা-হাজা পৃথিবীটার
মৃত্যু চাইনি এখনো কেউ।
নইলে তো কবে কড়িকাঠে
ঝুলিয়ে দিতাম। এবং এর
কৃতিত্বটুকু সবই তোমার
তুমি মানে নারী, যার ছোঁয়ায়
ঘুঁটে পুড়ে হয় গন্ধ ধূপ।
– চুপ করো তুমি, চুপ করো
পেয়েছে তোমাকে বাচালতায়।
– এটাও তো মজা। যতক্ষণ
তুমি পাশে থাকো, আমি নদী
নৌকোর পাল, ঝোড়ো হাওয়া।
তুমি চলে গেলে আমি পাহাড়
তাও নয়, যেন ইঁট বা কাঠ
কাঠের টেবিল, বইয়ের র্যাক
এত বোবা থাকি, লোকে ভাবে
মরে গেছি বুঝি অনেকদিন।
একটু আগে যে বললে না
সোনালী সুতোর লম্বা লেস্,
আসলে তখন সেইটাকেই
বুনি, যাতে লোকে দেখতে পায়
যে-যার বুকের সঙ্গোপন
উপনিবেশ।