
অগ্রিম টাকা নেবার কথা ছিলো প্রকাশনীর কাছ থেকে।
‘মধ্যবিত্ত’ আমার প্রথম জনপ্রিয় উপন্যাস যেটি পাঠকদের কাছে আমাকে ব্যাপকভাবে পরিচিত করে তোলে। জন্মের পরপরই আমার মা অসুস্থ হয়ে যান। তাকে নিয়ে কলকাতায় ছোটাছুটি চলে আমাদের। স্বাভাবিক গাড়ির চেয়েও অ্যাম্বুলেন্স বেশি চড়া হয় সেসময়টিতে আমার। বাড়িতে থাকার চেয়েও বেশিটা সময় কেটেছে হাসপাতালে। মা মরে যেতে পারেন এমন ভয় প্রতিটা মুহূর্তে বুকে নিয়ে দিন কাটতো। সেসব আমাদের পরিবারের জন্য বড় কষ্টের সময়। মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের সংগ্রাম দেখেছি আমি এসময়ে। সেসব দুঃখগাথা, ভালোবাসা, বিষাদ আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি উপন্যাস এর পাতায় পাতায়। অনেক কিছুই নিজের জীবনের সাথে মিলে যায় বলে এই উপন্যাস এর চরিত্র, দৃশ্যকল্পগুলোর কাছাকাছি হতে আমার কষ্ট হয়নি। পাঠকরাও প্রবল আবেগে কাছে টেনে নিয়েছেন ‘মধ্যবিত্ত’ উপন্যাসটি। আমি ভাগ্যবান!
‘রঙিলা কিতাব’ উপন্যাসটির মতোনই পাঠকদের কাছে এ বছর আনতে চাচ্ছিলাম এই উপন্যাস। দীর্ঘদিন আউট অফ স্টক হয়ে থাকা বইটি তুলে নিয়েছিলাম আগের প্রকাশনী থেকে। নতুন সব প্রকাশনীর সাথে কথা হচ্ছিলো এই উপন্যাস প্রকাশ এর ব্যাপারে। তাদের আগ্রহ আমার সাহস বাড়িয়েছে। কলকাতা থেকে সবার আগে ট্রামলাইন বুকস্ বইটি বের করতে চেয়েছিলো। সম্মতি দিয়েছিলাম আমি। নানান কারণে গত বছরে বইটি আর আনা যায়নি। এ বছর বাংলাদেশে যে প্রকাশনীর হাতে বইটি তুলে দেওয়ার কথা ছিলো তারা অগ্রিম টাকা হাতে দিলেই আমি সব কাজ বুঝিয়ে দেবো কথা দিয়েছিলাম। কাজ এগিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু এমন সময়েই করোনার আঘাত। জুলাই এর পরে বইটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এসময়ে।
আমার লেখালেখির জীবনে এই উপন্যাসটির ভূমিকা অনেক জরুরী। এ উপন্যাস এর পরেই আমি পাঠকদের কাছাকাছি হয়ে উঠি। উপন্যাস এর অনেকটা জুড়ে আমি আছি আর আছেন আমার মা। তাই এই বইটি নিয়ে আমার আবেগ পৃথিবী সমান। এমন আবেগ এর জায়গা থেকেই ঘরবন্দী দিনে মানুষের বিপদের সময়ে আচমকা মনে হলো বইটি আমি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে চাই। করোনার সময়ে ঘরে বসে বইটি পড়ে কিছুটা সময় যদি তাদের কাটে আমি তাতেই খুশি। তাতেই বুঝতে পারবো মানুষের জন্য কিছু করতে পারলাম। প্রকাশককে অন্য বই দেবো এই কথা বলা হলো। প্রয়োজন নেই অগ্রিম টাকার। অর্থের চেয়ে মানুষ বরাবরই জরুরী আমার কাছে। মানুষের উপন্যাস ‘মধ্যবিত্ত’ মানুষের হাতেই তুলে দেওয়া হলো। প্রকাশক মন খারাপ করেছেন। বেঁচে থাকলে মন ভালো করে দেওয়া হবে কথা দিলাম।
পিডিএফ কে উৎসাহিত করা একদমই উচিত না। করোনার দিনে উচিত অনুচিত খাটছে না। আপনারা সময় পেলে বইটি পড়বেন। শেয়ার করে ছড়িয়ে দেবেন। বইটির ফাইনাল ফাইলটি মেইলে খুঁজে পাচ্ছিনা আমি। তাই অনেক বানান ভুল থাকতে পারে। নিজের মতোন করে কোনোরকমে পিডিএফটি বানিয়েছি। এইসব ব্যাপারে আমার জ্ঞান অতি সামান্য। যে কোনো ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আপাতত এই। অনেককিছু লিখবার ইচ্ছে ছিলো। গুলিয়ে ফেলেছি। করোনার দিনে ভালো নেই মন। ভালো থাকবেন সবাই। করুনাময় আমাদের এই বিপদ থেকে রক্ষা করুক। আবার কোনো একদিন বইমেলার ভীড়ে আপনাদের সাথে দেখা হয়ে যাবে এই আশা রাখছি। ‘মধ্যবিত্ত’ আপনাদের হোক। ভালোবাসার হোক।
বি: দ্র: পেইজ থেকে কীভাবে পিডিএফ আপলোড দিতে হয় জানা নেই। তাই গুগল ড্রাইভের লিংক দিলাম। এখান থেকে আপনারা নামিয়ে নিতে পারবেন। ভালো থাকবেন। ভালোবাসা।