: কেমন আছ?
: যেমন তুমি কল্পনা করেছ।
: আমি তো জানি তুমি বেশ আছ।
: তোমার কল্পনা কি মিথ্যে হয়?
: হয়তো।
: যেমন-
: মন বলে তুমি ফিরবে।
: আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দ্যাখো, কী দেখলে?
: দুটি নদী।
: আর কিছু?
: ঢেউ যেন আছড়ে পরছে কূলহারা তীরে।
: তোমার চোখেও কি তাই?
: তাকিয়ে দ্যাখো, কিছু কি পেলে?
: শুধু শুকনো বালুচর।
: এ নদীটাতে একসময় প্রচণ্ড স্রোত ছিল।
: কিন্তু হঠাৎ করে শুকিয়ে গেল কীভাবে?
: চোখে এখন আর জল আসে না।
: চলো এখন আবার একটু কাঁদি।
: কার জন্য কাঁদব?
: অনেক তো কেঁদেছ, আজ নাহয় আর একটু কাঁদো।
: কিন্তু চোখে যদি জল না আসে তাহলে কি আর তাকে কান্না বলে?
: বাদ দাও এসব কথা। আচ্ছা তুমি কি এখন আর নদীর পাড়ে বসে বাঁশি বাজাও না?
: সেই নদীও শুকিয়ে গেছে।
: আজ নাহয় আমার চোখের দিকে তাকিয়ে একটু বাঁশি বাজাও।
: বাঁশিতে এখন আর সুর ওঠে না।
: কেন বাঁশিও কি শুকিয়ে গেছে?
: না, তবে বাঁশি বাজাতে যে সুর লাগে সেটা কি তুমি জানো?
: হ্যাঁ জানি।
: বুকের ভেতর এখন আর আগের মতো সুর নেই।
: কিন্তু আমার কানে যেন তোমার সেই বাঁশির সুর এখনও বাজছে।
: আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?
: একটা কেন, আজ তোমার যত খুশি জিজ্ঞেস করতে পারো।
: তোমার চোখে আজ এত ঢেউ কেন?
: নদীতে ঝড় উঠলে তো হবেই।
: হঠাৎ করে কেন তোমার হৃদয়ের মাঝে এত ঝড়?
: তোমার হৃদয়ে কি ঝড় ওঠেনি?
: চোখে ঢেউ নেই, তাই বুঝতে পারছি না।
: কিন্তু তোমার হাত কাঁপছে কেন?
: আমার বুকে হাত দিয়ে দ্যাখো।
: এ কী, তোমার হৃদয়েও তো ঢেউ বইছে।
: এগুলো ঢেউ না।
: তাহলে?
: হৃদয়ের রক্তক্ষরণ, ঝর্না হয়ে ঝরছে।
: তাহলে তো তুমি আর বেশিদিন বাঁচবে না।
: আমি তো সেই কবেই মরে গেছি।
: তাহলে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছ যে!
: হ্যাঁ ঠিকই বলেছ, তোমার সামনে এখন যাকে দেখছ এটা সেই আমি না।
: তাহলে কে তুমি?
: একটা জিন্দা লাশ।
: না, এ হতে পারে না।
: কেন পারে না? যেদিন আমাকে ফেলে চলে গেলে, সেদিন কি একটুকুও মনে হয়নি তোমায় ছাড়া আমি একটি মৃত কঙ্কাল মাত্র?
: হ্যাঁ হয়েছিল।
: তাহলে আজ আবার জিজ্ঞেস করছ কেন আমি কে?
: বাদ দাও এসব কথা। আচ্ছা আমি যেদিন চলে গিয়েছিলাম তখন থেকে তুমি কী ভাবতে?
: মন বলে তুমি ফিরবে।
: আর কিছু?
: না।
: আজ যদি বলি তোমার সেই ভাবনা সত্যি হয়েছে।
: বাস্তবে না স্বপ্নে?
: আমার বুকে হাত দিয়ে দ্যাখো।
: এ কী, চোখের মতো তোমার বুকেও তো ঢেউ আছড়ে পড়ছে!
: এখন বুঝেছ স্বপ্নে না বাস্তবে?
: বুঝলাম, কিন্তু এতদিনের জমে থাকা বরফ হঠাৎ করে গলল কীভাবে?
: কখনও কি ঘুড়ি উড়িয়েছ?
: হ্যাঁ উড়িয়েছি।
: সুতায় টান পড়লে ঘুড়ি আবার চলে আসে, এখন তো বুঝতে পেরেছ।
: বুঝলাম, কিন্তু আমিতো সেই ঘুড়ি খোলা আকাশে ছেড়ে দিয়েছি।
: এ কী, তোমার চোখে জল কেন? তুমি না বললে শুকিয়ে গেছে?
: হৃদয়ে টান পড়েছে প্রাপ্তি।
: তোমার সুতাও কি টান পড়েছে? তাহলে চলো এক সুতায় আবার পেঁচিয়ে যাই।
: কিন্তু-
: কোনো কিন্তু নেই।
: তাহলে?
: আজ থেকে আমি তোমার সেই সুতোয় বাঁধা ঘুড়ি।
: আর আমি?
: তুমি আমার সেই মনের বাগানে ফুটে থাকা গোলাপের কলি।