চারিদিকে বেজে ওঠে অন্ধকার সমুদ্রের স্বর ,- নতুন রাত্রির সাথে পৃথিবীর বিবাহের গান ! ফসল উঠিছে ফ’লে ,- রসে রসে ভরিছে শিকড় ; লক্ষ নক্ষত্রের সাথে কথা কয় পৃথিবীর প্রাণ ! সে…
জীবনানন্দ দাশ
জীবনানন্দ দাশ ( Jibanananda Das ) ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় কবি। তাকে বাংলা সাহিত্যের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট কবিদের মধ্যে একজন হিসেবে ধরে নেওয়া। জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। জীবনানন্দ দাশের বেশিরভাগ কবিতাই (Kobita) রচিত হয়েছে গ্রাম বাংলা নিয়ে তাই তাকে রূপসী বাংলার কবি বলা হয়। বাংলার মুখ, বনলতা সেন, পঁচিশ বছর পরে, কুড়ি বছর পরে, আমি যদি হতাম, সুরঞ্জনা ইত্যাদি তার বিখ্যাত কবিতা (Poem)। তার মা কুসুমকুমারী দাশও ছিলেন একজন বিখ্যাত মহিলা কবি। জীবনানন্দ দাশ ১৯৫৪ সালের ১৪ই অক্টোবর কলকাতার এক ট্রাম দুর্ঘটনায় নিহত হন। মৃত্যুর পরই তার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়।
১৩৩৩ __জীবনানন্দ দাশ
তোমার শরীর ,- তাই নিয়ে এসেছিলে একবার;- তারপর,- মানুষের ভিড় রাত্রি আর দিন তোমারে নিয়েছে ডেকে কোন দিকে জানিনি তা,- হয়েছে মলিন চক্ষু এই;- ছিঁড়ে গেছি- ফেড়ে গেছি ,- পৃথিবীর পথ হেঁটে…
প্রেম __জীবনানন্দ দাশ
আমরা ঘুমায়ে থাকি পৃথিবীর গহ্বরের মতো ,- পাহাড় নদীর পারে অন্ধকারে হয়েছে আহত একা- হরিণীর মতো আমাদের হৃদয় যখন ! জীবনের রোমাঞ্চের শেষ হলে ক্লান্তির মতন পাণ্ডুর পাতার মতো শিশিরে শিশিরে ইতস্তত…
মৃত্যুর আগে __জীবনানন্দ দাশ
আমরা হেঁটেছি যারা নির্জন খড়ের মাঠে পউষসন্ধ্যায়, দেখেছি মাঠের পারে নরম নদীর নারী ছড়াতেছে ফুল কুয়াশার ; কবেকার পাড়াগাঁর মেয়েদের মতো যেন হায় তারা সব; আমরা দেখেছি যারা অন্ধকারে আকন্দ ধুন্দুল জোনাকিতে…
স্বপ্নের হাত __জীবনানন্দ দাশ
পৃথিবীর বাধা- এই দেহের ব্যাঘাতে হৃদয়ে বেদনা জমে;- স্বপনের হাতে আমি তাই আমারে তুলিয়া দিতে চাই ! যেইসব ছায়া এসে পড়ে দিনের – রাতের ঢেউয়ে ,- তাহাদের তরে জেগে আছে আমার জীবন…
আমি কবি,–সেই কবি __জীবনানন্দ দাশ
আমি কবি,– সেই কবি– আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি ঝরা পালকের ছবি! আন্মনা আমি চেয়ে থাকি দূর হিঙুল-মেঘের পানে! মৌন নীলের ইশারায় কোন্ কামনা জাগিছে প্রাণে! বুকের বাদল উথলি উঠিছে কোন্ কাজরীর…
জীবন-মরণ দুয়ারে আমার __জীবনানন্দ দাশ
সরাইখানার গোলমাল আসে কানে, ঘরের শার্শি বাজে তাহাদের গানে, পর্দা যে উড়ে যায় তাদের হাসির ঝড়ের আঘাতে হায়! -মদের পাত্র গিয়েছে কবে যে ভেঙে! আজো মন ওঠে রেঙে দিলদারদের দরাজ গলায় রবে,…
সাগর বলাকা __জীবনানন্দ দাশ
ওরে কিশোর, বেঘোর ঘুমের বেহুঁশ হাওয়া ঠেলে পাতলা পাখা দিলি রে তোর দূর-দুরাশায় মেলে! ফেনার বৌয়ের নোন্তা মৌয়ের- মদের গেলাস লুটে, ভোর-সাগরের শরাবখানায়–মুসল্লাতে জুটে হিমের ঘুণে বেড়াস খুনের আগুনদানা জ্বেলে! ওরে কিশোর,…
একদিন খুঁজেছিনু যারে __জীবনানন্দ দাশ
একদিন খুঁজেছিনু যারে বকের পাখার ভিড়ে বাদলের গোধূলি-আঁধারে, মালতীলতার বনে,- কদমের তলে, নিঝুম ঘুমের ঘাটে,-কেয়াফুল,- শেফালীর দলে! -যাহারে খুঁজিয়াছিনু মাঠে মাঠে শরতের ভোরে হেমন্তের হিম ঘাসে যাহারে খুঁজিয়াছিনু ঝরোঝরো কামিনীর ব্যথার শিয়রে…
ছায়া-প্রিয়া __জীবনানন্দ দাশ
দুপুররাতে ও কার আওয়াজ! গান কে গাহে,- গান না! কপোত-বধূ ঘুমিয়ে আছে নিঝুম ঝিঁঝির বুকের কাছে; অস্তচাঁদের আলোর তলে এ কার তবে কান্না! গান কে গাহে,- গান না! শার্শি ঘরের উঠছে বেজে,…