শিম্পাঞ্জি, তোমাকে আজ বড় বেশি বিমর্ষ দেখলুম চিড়িয়াখানায়। তুমি ঝিলের কিনারে। দারুণ দুঃখিতভাবে বসে ছিলে। তুমি একবারও উঠলে না এসে লোহার দোলনায়; চাঁপাকলা, বাদাম, কাবলি-ছোলা–সবকিছু উপেক্ষিত ছড়ানো রইল। তুমি ফিরেও দেখলে না। দুঃখী মানুষের মতো হাঁটুর ভিতরে মাথা গুঁজে ঝিলের কিনারে শুধু বসে রইলে একা। শিম্পাঞ্জি, তোমাকে কেন এত বেশি ...
Read More »তোমাকে নয় – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
যেন কাউকে কটুবাক্য বলবার ভীষণ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু না, তোমাকে নয়; কিন্তু না, তোমাকে নয়। যেন যত দুঃখ আমি পেয়েছি, এবারে চতুর্গুণ করে তাকে ফিরিয়ে দেবার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু না, তোমাকে নয়; কিন্তু না, তোমাকে নয়। দুই চক্ষু ভেসে গেল রক্তের ধারায়। দমিত আক্রোশে খুঁড়ি নিজের পাতাল। দ্যাখো আমি যন্ত্রণায় ...
Read More »মিলিত মৃত্যু – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখ দ্বিতীয় বিদ্যায়। বরং বিক্ষত হও প্রশ্নের পাথরে। বরং বুদ্ধির নখে শান দাও, প্রতিবাদ করো। অন্তত আর যাই করো, সমস্ত কথায় অনায়াসে সম্মতি দিও না। কেননা, সমস্ত কথা যারা অনায়াসে মেনে নেয়, তারা আর কিছুই করে না, তারা আত্মবিনাশের পথ পরিস্কার করে। প্রসঙ্গত, শুভেন্দুর কথা বলা ...
Read More »সূর্যাস্তের পর – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
সূর্য ডুবে যাবার পর হাসির দমকে তাদের মুখের চামড়া কুঁচকে গেল, গালের মাংস কাঁপতে লাগল, বাঁ চোখ বুঁজে, ডান হাতের আঙুল মটকে তারা বলল, “শত্রুরা নিপাত যাক।” আমি দেখলাম, দিগন্ত থেকে গুঁড়ি মেরে ঠিক একটা শিকারি জন্তুর মতন রাত্রি এগিয়ে আসছে। বললাম, “রাত্রি হল।” তারা বলল, “হোক।” বললাম, “রাত্রিকে যেন ...
Read More »আবহমান – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া, লাউমাচাটার পাশে। ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল সন্ধ্যার বাতাসে। কে এইখানে এসেছিল অনেক বছর আগে, কেউ এইখানে ঘর বেঁধেছে নিবিড় অনুরাগে। কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে আসে, এই মাটিকে এই হাওয়াকে আবার ভালবাসে। ফুরয় না্ তার কিছুই ফুরয় না, নটেগাছটা বুড়িয়ে ...
Read More »হঠাৎ হাওয়া – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
হঠাৎ হাওয়া উঠেছে এই দুপুরে আকাশী নীল শান্তি বুঝি ছিনিয়ে নিতে চায়। মালোঠিগাঁও বিমূঢ়, হতবাক্। মেঘের ক্রোধ গর্জে ওঠে ঝড়ের ডঙ্কায়। এখনই এল ডাক। মন্দাকিনী মিলায় তাল তরঙ্গের নূপুরে। এ যেন হরধনুর টান ছিলাতে হেনেছে কেউ প্রবল টংকার। চিনের চোখ মীলিত। কার ভীষণ জটাজাল আকাশে পড়ে ছড়িয়ে, শোনো বাতাসে বাজে ...
Read More »হলুদ আলোর কবিতা – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
দুয়ারে হলুদ পর্দা। পর্দার বাহিরে ধুধু মাঠ আকাশে গৈরিক আলো জ্বলে। পৃথিবী কাঞ্চনপ্রভ রৌদ্রের অনলে শুদ্ধ হয়। কারা যেন সংসারের মায়াবী কপাট খুলে দিয়ে ঘাস, লতা, পাখির স্বভাবে সানন্দ সুস্থির চিত্তে মিশে গেছে। শান্ত দশ দিক। দুয়ারে হলুদ পর্দা। আকাশে গৈরিক আলো কাঁপে। সারাদিন কাঁপে। আকাশে গৈরিক আলো। হেমন্ত-দিনের মৃদু ...
Read More »মেলার মাঠে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
হাতখানা যার শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলাম, হঠাৎ কখন ছিটকে গিয়ে এই মাঠে সে হারিয়ে গেছে! এখন তাকে খুঁজব কোথায়! কোত্থেকে যে কোন্খানে যায় নিরুদ্দিষ্ট লোকজনেরা ভিড়ের মধ্যে ভাসতে-ভাসতে। হাসতে-হাসতে যাচ্ছে সবাই, কেউ কিনেছে বেলুন-চাকি, কেউ ঝুড়ি, কেউ কাঁসার বাসন, কেউ নিতান্ত কাঠের পাখি। সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি পড়ছে ...
Read More »মনে পড়ে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
ভুলে গেলে ভাল হত, তবু ভোলা গেল না এখনও। পঁয়ত্রিশ বছর পার হয়ে গেছে, তবু কোনো-কোনো মুহূর্তে তোমাকে মনে পড়ে। স্রোতের গোপন টানে ভেসে যায় পিতলের ঘড়া। অথচ বেদনা তার থেকে যায়। তাই বসুন্ধরা কেঁপে ওঠে ফাল্গুনের ঝড়ে। মনে পড়ে, মনে পড়ে, এখনও তোমাকে মনে পড়ে।
Read More »উলঙ্গ রাজা – নীরেন্দ্রনাথচক্রবর্তী
সবাই দেখছে যে, রাজা উলঙ্গ, তবুও সবাই হাততালি দিচ্ছে। সবাই চেঁচিয়ে বলছে; শাবাশ, শাবাশ! কারও মনে সংস্কার, কারও ভয়; কেউ-বা নিজের বুদ্ধি অন্য মানুষের কাছে বন্ধক দিয়েছে; কেউ-বা পরান্নভোজী, কেউ কৃপাপ্রার্থী, উমেদার, প্রবঞ্চক; কেউ ভাবছে, রাজবস্ত্র সত্যিই অতীব সূক্ষ্ম , চোখে পড়ছে না যদিও, তবু আছে, অন্তত থাকাটা কিছু অসম্ভব ...
Read More »