Category: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ওগো আমার এই জীবনের শেষ পরিপূর্ণতা, মরণ, আমার মরণ, তুমি কও আমারে কথা। সারা জনম তোমার লাগি প্রতিদিন যে আছি জাগি, তোমার তরে বহে বেড়াই দুঃখসুখের ব্যথা। মরণ, আমার মরণ, তুমি কও…

রাজধানী কলিকাতা; তেতালার ছাতে কাঠের কুঠরি এক ধারে; আলো আসে পূর্ব দিকে প্রথম প্রভাতে, বায়ু আসে দক্ষিণের দ্বারে। মেঝেতে বিছানা পাতা, দুয়ারে রাখিয়া মাথা বাহিরে আঁখিরে দিই ছুটি, সৌধ-ছাদ শত শত ঢাকিয়া…

স্বপ্নমঙ্গল স্বপ্ন দেখেছেন রাত্রে হবুচন্দ্র ভূপ, অর্থ তার ভাবি ভাবি গবুচন্দ্র চুপ। শিয়রে বসিয়ে যেন তিনটে বাঁদরে উকুন বাছিতেছিল পরম আদরে। একটু নড়িতে গেলে গালে মারে চড়, চোখে মুখে লাগে তার নখের…

খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফিরে পরশপাথর। মাথায় বৃহৎ জটা ধূলায় কাদায় কটা, মলিন ছায়ার মতো ক্ষীণ কলেবর। ওষ্ঠে অধরেতে চাপি অন্তরের দ্বার ঝাঁপি রাত্রিদিন তীব্র জ্বালা জ্বেলে রাখে চোখে। দুটো নেত্র সদা যেন…

খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে বনের পাখি ছিল বনে। একদা কী করিয়া মিলন হল দোঁহে, কী ছিল বিধাতার মনে। বনের পাখি বলে, খাঁচার পাখি ভাই, বনেতে যাই দোঁহে মিলে। খাঁচার পাখি বলে–…

হাতে তুলে দাও আকাশের চাঁদ– এই হল তার বুলি। দিবস রজনী যেতেছে বহিয়া, কাঁদে সে দু হাত তুলি। হাসিছে আকাশ, বহিছে বাতাস, পাখিরা গাহিছে সুখে। সকালে রাখাল চলিয়াছে মাঠে, বিকালে ঘরের মুখে।…

দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি; বেলা দ্বিপ্রহর; হেমন্তের রৌদ্র ক্রমে হতেছে প্রখর। জনশূন্য পল্লিপথে ধূলি উড়ে যায় মধ্যাহ্ন-বাতাসে; স্নিগ্ধ অশত্থের ছায় ক্লান্ত বৃদ্ধা ভিখারিণী জীর্ণ বস্ত্র পাতি ঘুমায়ে পড়েছে; যেন রৌদ্রময়ী রাতি ঝাঁ ঝাঁ…

হে আদিজননী সিন্ধু,বসুন্ধরা সন্তান তোমার, একমাত্র কন্যা তব কোলে। তাই তন্দ্রা নাহি আর চক্ষে তব, তাই বক্ষ জুড়ি সদা শঙ্কা,সদা আশা, সদা আন্দোলন; তাই উঠে বেদমন্ত্রসম ভাষা নিরন্তর প্রশান্ত অম্বরে, মহেন্দ্রমন্দির-পানে অন্তরের…

ওরে মৃত্যু, জানি তুই আমার বক্ষের মাঝে বেঁধেছিস বাসা। যেখানে নির্জন কুঞ্জে ফুটে আছে যত মোর স্নেহ-ভালোবাসা, গোপন মনের আশা, জীবনের দুঃখ সুখ, মর্মের বেদনা, চিরদিবসের যত হাসি-অশ্রু-চিহ্ন-আঁকা বাসনা-সাধনা; যেখানে নন্দন-ছায়ে নিঃশঙ্কে…