আজ কোনো কাজ নয়– সব ফেলে দিয়ে ছন্দ বন্ধ গ্রন্থ গীত– এসো তুমি প্রিয়ে, আজন্ম-সাধন-ধন সুন্দরী আমার কবিতা, কল্পনালতা। শুধু একবার কাছে বোসো। আজ শুধু কূজন গুঞ্জন তোমাতে আমাতে; শুধু নীরবে ভুঞ্জন…
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তী লেখক। আজও পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে তার সমপর্যায়ের কোনো লেখকের জন্ম হয়নি। একাধারে তিনি ছিলেন একজন কবি, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, চিত্রকর, নাট্যকার, অভিনেতা, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, কণ্ঠশিল্পী এবং দার্শনিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বিশ্বকবি, কবিগুরু, গুরুদেব বলা হয়। তিনি ১৮৬১ সালের ৭ মে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছদ্মনাম ভানুসিংহ ঠাকুর । গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি ১৯১৩ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশে, ভারত ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত তিনিই রচনা করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা (kobita), গান, নাটক, উপন্যাস , ছোটগল্প সমভাবে জনপ্রিয়। সোনার তরী, যেতে নাহি দিব, দুই বিঘা জমি, বিপদে মোরে রক্ষা করো ইত্যাদি তার বিখ্যাত কবিতা (poem)।
নদীপথে __রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
গগন ঢাকা ঘন মেঘে, পবন বহে খর বেগে। অশনি ঝনঝন ধ্বনিছে ঘন ঘন, নদীতে ঢেউ উঠে জেগে। পবন বহে খর বেগে। তীরেতে তরুরাজি দোলে আকুল মর্মর-রোলে। চিকুর চিকিমিকে চকিয়া দিকে দিকে তিমির…
ব্যর্থ যৌবন __রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আজি যে রজনী যায় ফিরাইব তায় কেমনে? কেন নয়নের জল ঝরিছে বিফল নয়নে! এ বেশভূষণ লহ সখী, লহ, এ কুসুমমালা হয়েছে অসহ– এমন যামিনী কাটিল বিরহ শয়নে। আজি যে-রজনী যায় ফিরাইব তায়…
লজ্জা __রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার হৃদয় প্রাণ সকলই করেছি দান, কেবল শরমখানি রেখেছি। চাহিয়া নিজের পানে নিশিদিন সাবধানে সযতনে আপনারে ঢেকেছি। হে বঁধু, এ স্বচ্ছ বাস করে মোরে পরিহাস, সতত রাখিতে নারি ধরিয়া– চাহিয়া আঁখির কোণে…
বসুন্ধরা __রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমারে ফিরায়ে লহ অয়ি বসুন্ধরে, কোলের সন্তানে তব কোলের ভিতরে, বিপুল অঞ্চল-তলে। ওগো মা মৃন্ময়ী, তোমার মৃত্তিকা-মাঝে ব্যাপ্ত হয়ে রই; দিগ্বিদিকে আপনারে দিই বিস্তারিয়া বসন্তের আনন্দের মতো; বিদারিয়া এ বক্ষপঞ্জর, টুটিয়া পাষাণ-বন্ধ…
বন্ধন __রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বন্ধন? বন্ধন বটে, সকলি বন্ধন– স্নেহ প্রেম সুখতৃষ্ণা; সে যে মাতৃপাণি স্তন হতে স্তনান্তরে লইতেছে টানি, নব নব রসস্রোতে পূর্ণ করি মন সদা করাইছে পান। স্তন্যের পিপাসা কল্যাণদায়িনীরূপে থাকে শিশুমুখে– তেমনি সহজ…
মুক্তি __রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
চক্ষু কর্ণ বুদ্ধি মন সব রুদ্ধ করি, বিমুখ হইয়া সর্ব জগতের পানে, শুদ্ধ আপনার ক্ষুদ্র আত্মাটিরে ধরি মুক্তি-আশে সন্তরিব কোথায় কে জানে! পার্শ্ব দিয়ে ভেসে যাবে বিশ্বমহাতরী অম্বর আকুল করি যাত্রীদের গানে,…
দরিদ্রা __রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
দরিদ্রা বলিয়া তোরে বেশি ভালোবাসি হে ধরিত্রী, স্নেহ তোর বেশি ভালো লাগে, বেদনাকাতর মুখে সকরুণ হাসি, দেখে মোর মর্ম-মাঝে বড়ো ব্যথা জাগে। আপনার বক্ষ হতে রস-রক্ত নিয়ে প্রাণটুকু দিয়েছিস সন্তানের দেহে, অহর্নিশি…
আত্মসমর্পণ __রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তোমার আনন্দগানে আমি দিব সুর যাহা জানি দু-একটি প্রীতি-সুমধুর অন্তরের ছন্দোগাথা; দুঃখের ক্রন্দনে বাজিবে আমার কণ্ঠ বিষাদবিধুর তোমার কণ্ঠের সনে; কুসুমে চন্দনে তোমারে পূজিব আমি; পরাব সিন্দূর তোমার সীমন্তে ভালে; বিচিত্র বন্ধনে…
অচল স্মৃতি __রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার হৃদয়ভূমি-মাঝখানে জাগিয়া রয়েছে নিতি অচল ধবল শৈল-সমান একটি অচল স্মৃতি। প্রতিদিন ঘিরি ঘিরি সে নীরব হিমগিরি আমার দিবস আমার রজনী আসিছে যেতেছে ফিরি। যেখানে চরণ রেখেছে সে মোর মর্ম গভীরতম– উন্নত…